দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে নারী ও মেয়েদের স্বপ্নপূরণের পথে রাষ্ট্রকে বিএনপি তার সঙ্গী করবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই স্বপ্নপূরণে ৬টি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বিএনপির ভবিষ্যৎ নীতিমালায় সেই সম্মান ও বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
দৃঢ়বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও প্রতিশ্রুতির শক্তি নিয়ে যে ৬টি অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তারেক রহমান প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলো হলো- নারী গৃহপ্রধানদের নামে ‘ফ্যামিলি কার্ড’, যাতে পরিবারগুলোর আসল ব্যক্তির হাতে সহায়তা ও প্রণোদনা পৌঁছে যায়। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা, কারণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে আপস নয়। মেয়েদের জন্য শক্তিশালী একাডেমিক ও কারিগরি শিক্ষার সুযোগ-যাতে গ্রাম বা শহর, যেখানেই হোক, প্রতিটি মেয়ে দক্ষতা অর্জন করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। এছাড়া নীতিনির্ধারণে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি- রাজনীতি, প্রশাসন, নীতি প্রণয়নে নারীদের আসন নিশ্চিত করা। কারণ, নিরাপদ জাতি গঠনে এর বিকল্প নেই। মর্যাদা ও স্বাধীনতার সুরক্ষা যাতে প্রতিটি মেয়ে নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে, নিজের কথা বলতে পারে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে এবং ভয়মুক্ত জীবনযাপন করতে পারে। পরিবার ও সামাজিক কল্যাণকে নীতির কেন্দ্রে রাখা-স্বাস্থ্য, গ্রামীণ উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর বিশেষ নজর রাখা। প্রতিটি মেয়ে যে স্বপ্ন দেখে, তার সেই স্বপ্নপূরণের পথে রাষ্ট্রকে বিএনপি তার সঙ্গী করব, প্রতিবন্ধক নয় বলেও বাণীতে জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে আসুন আমরা প্রত্যেক মেয়ের স্বপ্ন দেখার, শেখার, নেতৃত্ব দেওয়ার এবং মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকারকে উদযাপন করি। একজন কন্যাসন্তানের বাবা হিসাবে আমি জানি, মেয়েদের ক্ষমতায়ন শুধুই নীতির বিষয় নয়, বরং এটা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের বাংলাদেশের স্বপ্ন এমন এক দেশগড়া, যেখানে প্রতিটি মেয়ে সেই একই স্বাধীনতা, সুযোগ ও নিরাপত্তা পাবে, যা প্রতিটি অভিভাবক নিজের সন্তানের জন্য কামনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের রয়েছে জীবন বদলে দেয়ার ঐতিহ্য এবং সুযোগ পেলে আমরা আরও অনেক কিছু করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা দেখেছি, কীভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে একে কেবল একটি শিল্প থেকে আশার প্রতীকে পরিণত করেছিলেন। লাখ লাখ নারী আনুষ্ঠানিক কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন, অর্জন করেছিলেন আয়, মর্যাদা ও স্বাধীনতা। তার নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়’। যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের নারী ও কন্যাশিশুদের জীবনের মানোন্নয়নকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মেয়েদের শিক্ষা একটি অধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, কোনো বিশেষ সুবিধা হিসাবে নয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মেয়েদের জন্য শিক্ষা বিনামূল্যে করা হয়, আর ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ ও ‘শিক্ষার জন্য নগদ সহায়তা’ কর্মসূচির মাধ্যমে লাখ লাখ মেয়ে স্কুলে থাকতে পেরেছে, যা বদলে দিয়েছে পরিবারের ভাগ্য, গড়ে তুলেছে শক্তিশালী নারীসমাজ এবং সৃষ্টি করেছে এক ক্ষমতায়িত নারী প্রজন্ম।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তার পথপ্রদর্শিত ‘ফিমেল সেকেন্ডারি স্কুল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবার মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গসমতা অর্জিত হয় এবং শিশুবিবাহের হার কমে আসে। এই প্রকল্পটি পরে বিশ্বব্যাপী মেয়েদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের সফল মডেল হিসাবে স্বীকৃত হয় এবং বহু উন্নয়নশীল দেশে অনুসরণ করা হয়। এই পদক্ষেপগুলো দেখিয়েছে, সুশাসন যখন কন্যাশিশুর মর্যাদাকে সম্মান করে এবং তাদের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে, তখন কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।